মঙ্গলে প্রতিদিন গড়ে ৪৭৭ মাইক্রোসেকেন্ড সময় পৃথিবীর তুলনায় দ্রুত চলে। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের প্রভাবে এই পার্থক্য তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে সৌরজগতের ভেতরে নেভিগেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (NIST)–এর গবেষক নিল অ্যাশবি ও বিজুনাথ পাতলা এই হিসাব করেছেন। তাঁরা মঙ্গলের দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ (পৃথিবীর তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ কম), সূর্যের চারপাশে মঙ্গলের কক্ষপথের গতি ও বিচ্যুতি, এবং সূর্য–পৃথিবী–চাঁদের সম্মিলিত মাধ্যাকর্ষণ প্রভাব বিবেচনায় নিয়েছেন। পাতলা বলেন, “তিনটি মহাজাগতিক বস্তুর প্রভাব হিসাব করাই জটিল। এখানে আমরা চারটি—সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ ও মঙ্গল—নিয়ে কাজ করছি। বিষয়টি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কঠিন।”
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী, ঘড়ির কাঁটা কখনো দ্রুত আবার কখনো ধীরে চলতে পারে, নির্ভর করে বস্তুটির গতি ও মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের ওপর। এ ঘটনাকে বলা হয় টাইম ডাইলেশন। যেমন, কোনো যমজ যদি আলোর কাছাকাছি গতিতে মহাকাশযানে ভ্রমণ করে, তবে পৃথিবীতে থাকা যমজের তুলনায় সে কম বয়সী হয়ে ফিরে আসবে। একইভাবে কৃষ্ণগহ্বরের কাছে সময় আরও ধীরে চলে, কারণ সেখানে মাধ্যাকর্ষণ অত্যন্ত শক্তিশালী।
মঙ্গল সূর্য থেকে পৃথিবীর তুলনায় দূরে থাকায় তার কক্ষপথ ধীর। তবে মঙ্গলের কক্ষপথ পৃথিবীর তুলনায় বেশি উপবৃত্তাকার হওয়ায় সূর্যের কাছাকাছি এলে গতি বাড়ে, দূরে গেলে কমে। এর সঙ্গে সূর্য ও পৃথিবী–চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ প্রভাব যোগ হয়ে মঙ্গলের ঘড়ির কাঁটা পৃথিবীর তুলনায় ভিন্নভাবে চলে।
একজন মহাকাশচারী যদি মঙ্গলে থাকেন, তাঁর কাছে এক সেকেন্ড ঠিক এক সেকেন্ডই মনে হবে। কিন্তু পৃথিবী থেকে দেখা হলে সেই সেকেন্ড সামান্য দ্রুত চলে যাবে। গড়ে প্রতিদিন ৪৭৭ মাইক্রোসেকেন্ড পার্থক্য তৈরি হয়, যা কখনো বাড়ে আবার কমে—মঙ্গলের অবস্থান অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২২৬ মাইক্রোসেকেন্ড ওঠানামা করতে পারে।
এই পার্থক্য হয়তো কৃষ্ণগহ্বর বা আলোর গতির মহাকাশযানের মতো নাটকীয় নয়, কিন্তু ভবিষ্যতের যোগাযোগ ও নেভিগেশন ব্যবস্থায় বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ৫জি প্রযুক্তিতে সময়ের নির্ভুলতা এক–দশমাংশ মাইক্রোসেকেন্ড পর্যন্ত জরুরি। তাই পৃথিবী ও মঙ্গলের নেটওয়ার্ক সঠিকভাবে সমন্বয় করতে হলে এই পার্থক্য জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।
অ্যাশবি বলেন, “মঙ্গলের পৃষ্ঠে রোভার ছড়িয়ে পড়তে হয়তো আরও কয়েক দশক লাগবে। তবে এখন থেকেই অন্য গ্রহে নেভিগেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জটিলতা বোঝা জরুরি।” তিনি আরও যোগ করেন, “বর্তমান জিপিএসের মতো ভবিষ্যতের সিস্টেমও নির্ভুল ঘড়ির ওপর নির্ভর করবে, আর আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দিয়ে এসব বিশ্লেষণ করা সম্ভব।”
‘মেয়েদের চেহারা বা ওজন কেমন হবে, সে সিদ্ধান্ত অন্য কেউ নেবে কেন?’
গুইলারমো দেল তোরোর ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’: দানব যখন মানুষের চেয়েও মানবিক
এর আগে তাঁরা চাঁদে সময়ের পার্থক্য হিসাব করেছিলেন। দেখা যায়, চাঁদের ঘড়ি পৃথিবীর তুলনায় প্রতিদিন ৫৬ মাইক্রোসেকেন্ড দ্রুত চলে। পাতলা বলেন, “চাঁদ ও মঙ্গলের সময় এখন ঠিকঠাক মিলে যাচ্ছে। এটি আমাদের সৌরজগতজুড়ে বিস্তারের বিজ্ঞান কল্পকাহিনির স্বপ্নকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।”
তাঁদের গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে দ্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নাল–এ।