গর্ভাবস্থা প্রতিটি নারীর জীবনে এক বিশেষ সময়। এই সময়ে শরীরে হরমোনের অনেক পরিবর্তন আসে, যার প্রভাব পড়ে চুলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে। অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত থাকেন, যা স্বাভাবিক। তবে কখন এই চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন আর কখন নয়, তা জানা জরুরি।

কেন চুল পড়ে?
গর্ভাবস্থায় চুল পড়ার প্রধান কারণ হলো হরমোনের পরিবর্তন। সাধারণত, আমাদের চুলের তিনটি পর্যায় থাকে: বৃদ্ধি (অ্যানাজেন), বিশ্রাম (ক্যাটাজেন) এবং ঝরে যাওয়া (টেলোজেন)। গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে চুলের বৃদ্ধি পর্যায় দীর্ঘায়িত হয়। এতে চুল ঘন ও সুন্দর দেখায়। কিন্তু প্রসবের পর যখন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়, তখন অনেক চুল একসাথে বিশ্রাম পর্যায়ে চলে যায় এবং ঝরে পড়তে শুরু করে। একে ‘টেলোজেন এফ্লুভিয়াম’ বলা হয়। এটি সাধারণত প্রসবের পর ২-৪ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। তাই এই সময়ে চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক।
কখন দুশ্চিন্তা করবেন?
যদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চুল পড়তে শুরু করে, তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। থাইরয়েডের সমস্যা, আয়রনের অভাব বা অন্য কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিও চুল পড়ার কারণ হতে পারে। যদি চুল পড়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত ক্লান্তি, ফ্যাকাশে ত্বক, বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন।
চুলের যত্নে কী করবেন?
গর্ভাবস্থায় চুলের যত্নে কিছু সহজ টিপস মেনে চলতে পারেন। চুল নরম হাতে শ্যাম্পু করুন এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুল আঁচড়ানোর সময় মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন এবং ভেজা চুল আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকুন। টাইট খোঁপা বা ঝুঁটি করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে চুলের গোড়ায় টান পড়ে এবং চুল বেশি ঝরে যেতে পারে। প্রাকৃতিক হেয়ার মাস্ক যেমন অ্যালোভেরা, দই বা ডিমের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। রাসায়নিকযুক্ত চুলের পণ্য এড়িয়ে চলুন এবং হেয়ার ড্রায়ার বা ফ্ল্যাট আয়রনের মতো তাপীয় সরঞ্জাম কম ব্যবহার করুন।
লাইফস্টাইল কেমন হবে?
একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গর্ভাবস্থায় চুল পড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। আপনার খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন (বিশেষ করে বায়োটিন, ভিটামিন সি এবং ই) এবং খনিজ পদার্থ (যেমন আয়রন ও জিঙ্ক) অন্তর্ভুক্ত করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন। পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমাতেও মনোযোগ দিন। যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা পরোক্ষভাবে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
সবশেষে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় চুল পড়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি প্রসবের পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে, যদি আপনার মনে কোনো উদ্বেগ থাকে বা অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তবে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। তিনি আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লেখা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় চুল পড়া সমস্যা নিয়ে শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনের জন্য। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় এই লেখার ওপর নির্ভর না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।