ফ্যাশন প্রকৃতপক্ষেই পৃথিবীতে দূষণ ও আরও নানা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাত্রাছাড়া পোশাক পরিচ্ছদ উৎপাদন এবং নষ্টের জন্য তো বটেই, পোশাকে কৃত্রিম উপাদান যেমন সিন্থেটিক, মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং নানা রাসায়নিকের ব্যবহারের জন্যও বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। আর সেই জন্যই প্রতি দিন জোরালো হচ্ছে ‘সাস্টেনেবল ফ্যাশন’-এর দাবিতে পরিবেশবাদীদের আওয়াজ। যার নানা শর্তের মধ্যে একটি জরুরি শর্ত হল পোশাকের অপচয় বন্ধ করা!

পুরনো জামা এক দিন ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। বাড়ছে আবর্জনা। বাড়ছে বর্জ্য। নষ্ট হচ্ছে পৃথিবী। সেই ক্ষতি এড়াতেই পোশাকের পুনর্ব্যবহারের স্লোগান উঠেছে। স্লোগান উঠেছে কৃত্রিম তন্তুর হাত থেকে প্রাকৃতিক সুতো দিয়ে তৈরি পরিধান বাঁচানোর জন্য। স্লোগান উঠেছে স্থায়িত্ব বা সাস্টেনেবিলিটির পক্ষে।
সম্প্রতি সেই সাস্টেনেবিলিটি নিয়েই আলোচনাসভা ডেকেছিল কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি। আলোচনায় বসেছিলেন নিজস্ব ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া উদ্যোক্তারা। কথায় কথায় উঠে এল সাস্টেনেবল ফ্যাশনের কথাও। দেখা গেল এ ব্যাপারে একটি বিষয়ে সকলেই একমত— মানুষ বেশি কিনছেন। কিন্তু ভাল জিনিস কিনছেন কম। ফলে দেশের যে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী শাড়ি বা কাপড়, তার কোনও উন্নতি হচ্ছে না। মাঝখান থেকে মেশিনে বোনা ডিজিটাল প্রিন্টের কৃত্রিম তন্তুতে বোনা কাপড়চোপড় বিক্রি হচ্ছে বেশি। সাস্টেনেবল ফ্যাশনের অন্যতম শর্ত ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচানো এবং সেই শিল্পের সঙ্গে জুড়ে থাকা মানুষগুলিকে বঞ্চিত হতে না দেওয়া।
আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন ফ্যাশন সংস্থা ‘সুতা’র দুই প্রতিষ্ঠাতা— তানিয়া বিশ্বাস এবং সুজাতা বিশ্বাস। তাঁরা বললেন, ‘‘সুতির কাপড়, তাঁত শিল্প বা অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী কাপড়চোপড় এবং তার শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিতে হবে মানুষকেই। তাঁদের উচিত, দাম বেশি হলেও খাঁটি জিনিসের কদর করা। একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও খাঁটি জিনিসটিই কেনা।’’
কিন্তু ফ্যাশন যেখানে লক্ষ্য আর ক্রক্ষমতা যখন সীমিত, সেখানে খাঁটিত্বের কথা কি আর মাথায় থাকে? জবাবে তানিয়ার পরামর্শ, ‘‘একটি শাড়িকে অন্তত ১০ রকম ভাবে স্টাইল করে পরা যেতে পারে। একটি সুতির কুর্তাকেও নানা ভাবে পরা যেতে পারে। একটি ভাল জিনিস পরলে, তা লোকের চোখে পড়বেই।’’
তাঁর বক্তব্য, পাঁচটা সস্তা জিনিসের দাম এবং খরচ পুষিয়ে দেবে একটা দামি পোশাক। সুজাতা আরও এক ধাপ এগিয়ে বললেন, ‘‘আমি তো মনে করি, যে পোশাকটায় এক বছর হাত দেননি, সেই পোশাক দিয়ে অন্য কিছু বানিয়ে নিন। ব্যাগ, কুশন কভার, এমনকি তাতে অন্য রকম নকশা দিয়ে নতুন একটা জামাও বানিয়ে নিতে পারেন। তাতে যেমন ফ্যাশনও অন্য রকম হবে, তেমনই পোশাক নষ্টও হবে কম।’’