স্যার মো. ফারাহ বলেছেন, তিনি স্বস্তি পেয়েছেন যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। ফারাহ বলেছেন, তারা অবৈধভাবে ব্রিটেনে এসেছিলেন।
অলিম্পিক তারকা ফারাহ সোমবার প্রকাশ করেছেন যে তার আসল নাম হুসেইন আবদি কাহিন, তবে তিনি মোহাম্মদ ফারাহ নামে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন। যারা তাকে অবৈধভাবে ব্রিটেনে নিয়ে এসেছিল তারাই তাকে মোহাম্মদ ফারাহ নামটি দিয়েছিল।
বিবিসি ও রেড বুল স্টুডিওর একটি তথ্যচিত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে। তথ্যচিত্রে মো ফারাহ বলেছেন, তার বাবা-মা কখনো ব্রিটেনে যাননি।
ফারাহের বাবা আবদি সোমালিল্যান্ডে গৃহযুদ্ধের সময় বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। তখন ফারাহের বয়স ছিল চার বছর।
তার দুই ভাই এখনও সোমালিল্যান্ডের একটি খামারে বসবাস করে।
ফারাহর এই মিথ্যা কথা স্বীকার করার পরও ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবিসিকে বলেছে, এ বিষয়ে কোনো তদন্ত হবে না। [আরও পড়ুন : নখ সাদা, হলুদ বা নীল হয়ে গেলে যা বুঝবেন]
বিবিসি রেডিও ফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ ফারাহ বলেছেন, “আমি এতে স্বস্তি পেয়েছি। এটি আমার দেশ। যদি অ্যালেন [শিক্ষক] এবং আমার সমর্থকরা.. যারা শৈশব থেকেই আমার পাশে ছিলেন.. তারা যদি আমাকে সমর্থন না করতেন, তাহলে আমি কখনোই এটা করার সাহস পেতাম না।”
“আমার জীবনে অনেকের অনুগ্রহ আছে, বিশেষ করে আমার স্ত্রী, যিনি আমার ক্যারিয়ার জুড়ে আমাকে সাহস যুগিয়েছেন এবং যিনি আমাকে সবার সামনে কথা বলার সাহস দিয়েছেন, বলেছেন যে এটি করা সঠিক ছিল।”
ফারাহ তার গল্প বলেছেন
“আমি আমার পরিবারের সাথেও এই বিষয়ে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করছিলাম। জনসমক্ষে তো কথাই বলতে পারতাম না। এখানে পৌঁছাতে আমার অনেক সময় লেগেছে, কিন্তু আমি খুশি যে আমি এই তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছি এবং আমার শৈশব সম্পর্কে লোকেদের জানাতে পেরেছি।”
মো. ফারাহ তার যুক্তরাজ্যে আসার সত্যতা, তার শৈশবের গল্প এবং ২০১২ সালে অলিম্পিক পদক জয়ের গল্প তুলে ধরেছেন।
মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, ফারাহের সাথে কী ঘটেছে তা তদন্ত করছে অফিসাররা। একটি বিবৃতিতে, পুলিশ বলেছে যে তাদের কাছে “এখন” কোনো রিপোর্ট নেই। [আরও পড়ুন : ভারতে নতুন জীবন পেল পাকিস্তানের মেয়ে]
তিনি বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন আধুনিক দাসত্বের শিকার অনেক শিশু লন্ডনের রাস্তায় ছিল।
ফারাহের স্ত্রী তানিয়া বলেন, সত্য জানার পর তিনি অনেক রকমের ভাবনার ভেতর দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, “প্রথমে আমি তার জন্য দুঃখিত এবং খারাপ বোধ করতাম। আমি ৯ বছর বয়সী ফারাহ সম্পর্কে ভাবতে শুরু করি এবং আমার খুব খারাপ লাগে। কিন্তু একই সাথে যারা তার সাথে এমন আচরণ করেছিল তাদের ওপর আমার রাগ হয়।
তানিয়া বলেন, “ফারাহ এখন অবশেষে নিজেকে সেই কষ্ট বোধ করার অনুমতি দিয়েছে। এই তথ্যচিত্রটি তাকে এর মুখোমুখি হওয়ার সাহস দিয়েছে। এটা ঠিক, এটা চিকিৎসার মতো কাজ করেছে।”
আইন অনুযায়ী, ভুলভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া যে কোনো ব্যক্তিকে সরকার দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবিসিকে বলেছে যে তারা এই ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেবে না, কারণ এটা বিশ্বাস করা হয় যে- শিশুরা নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য গৃহীত ভুল পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করে না। [আরও পড়ুন : সিগারেট ছাড়তে কষ্ট হয় কেন?]
শিশু পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মো. ফারাহ বলেন, “কোন শিশুই এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে চায় না। আমি খুব ছোট ছিলাম যখন আমার বিষয়ে অন্য কেউ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই দেশের জন্য আমি কিছু করার সুযোগ পেয়েছি, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি পেয়েছি। আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্বিত বোধ করছি।”
“আমার হাতে যা ছিল, করেছি। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার হাতে অনেক কিছু ছিল না।”
ফারাহ’র মতে, তিনি তার পিই শিক্ষককে বিশ্বাস করেছিলেন যিনি তাকে অন্য পরিবারে বড় হতে সাহায্য করেছিলেন। ওই শিক্ষকরে বদৌলতেই ফারাহ ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন এবং তিনি যাতে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিতে পারেন, সেজন্য তার পাসপোর্ট করা গেছে।
এসব সত্য প্রকাশ করার জন্য ফারাহ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছেন।
বিবিসির সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “আমি যে কষ্টের মধ্য দিয়ে গেছি তা বলতে পেরে আমি আনন্দিত। কারণ আজ আমি যা কিছু, এসবের জন্যই আমি তা। [আরও পড়ুন : ১০০ বছর বাঁচার রেসিপি কী?]
ফারাহ বলেন যে, এই সত্য তুলে ধরার পেছনে তার উদ্দেশ্য ছিল মানব পাচার এবং দাসত্বের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।
তিনি বলেন, “আমি জানতাম না যে আমি যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, এত মানুষও তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায় আমি কতটা ভাগ্যবান।
“আমার দৌড়ের কারণেই আমি বেঁচে গিয়েছিলাম এবং আমি অন্যদের থেকে আলাদা।”
যে নারী ফারাহকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন তার সঙ্গে বিবিসি কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
ফারাহ বলেন, “যে দলটি ডকুমেন্টারিটি তৈরি করেছে তারা ওই নারীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সে কিছুই বলতে চায়নি, আমি শুধু এটুকুই জানি। তার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই, আমিও চাইও না যে কোনো যোগযোগ হোক। [আরও পড়ুন : চুলের যত্ন : এই চারটি সহজ উপায়ে আপনার প্রাণহীন চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনুন]