১০০ বছর বাঁচার রেসিপি কী?

তারিখটি ছিল ২ জানুয়ারী এবং দিনটি ছিল শুক্রবার। জাপানের একটি ছোট গ্রামে একটি কন্যা শিশুর জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয়েছিল কেন।

এটা ১৯০৩ সালের কথা। কেন তানাকা ১১৯ বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিলে মারা যান। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন।

জীবনের শেষ বছরগুলো তিনি একটি নার্সিংহোমে কাটিয়েছেন। তিনি সকাল ছয়টায় উঠতেন। গণিত প্রশ্নের সমাধান করতেন। বোর্ড গেম খেলতেন। চকলেট কফি এবং সোডাও পান করতেন।

একটা সময় ছিল যখন প্রবীণরা একশ বছর বেঁচে থাকার আশীর্বাদ করতেন, কিন্তু এমন চিন্তাকে অসম্ভব বলে মনে করা হতো, কিন্তু এখন আর তা মনে করা হয় না।

তাই একটু খুঁজে দেখা যাক একশ বছর বেঁচে থাকার রেসিপি কী?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি।

দ্বিতীয় জীবন
ডা. হিরোকো আকিয়ামা, যিনি জাপানের বিজ্ঞান কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, বলেছেন, “এখন একশ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকা অস্বাভাবিক কিছু না।”

ডা. হিরোকো আকিয়ামার দক্ষতা ‘স্টাডি অফ এজিং’-এ।

তিনি বলেছেন যে জাপানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। জাপানে মহিলাদের গড় আয়ু এখন ৮৮ এবং পুরুষদের গড় আয়ু ৮২ বছর। জাপানের জনসংখ্যার ২৯ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি।

গড় বয়সের নিরিখে শুধুমাত্র হংকং, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, ইতালি এবং স্পেন জাপানের কাছাকাছি আসে। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৮৬ হাজার ৫১০ জন নাগরিকের বয়স শতবর্ষ বা তার বেশি। [আরও পড়ুন : ইন্টারনেটে কেবল ব্রাউজ করেই অর্থ উপার্জনের সুযোগ]

ডা. হিরোকো বলেছেন, “জাপানে মানুষের দীর্ঘায়ু হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল ইউনিভার্সাল হেলথ ইন্স্যুরেন্স সিস্টেম। আমরা এটি ১৯৬০-এর দশকে শুরু করেছিলাম। এখানে মানুষ সহজে স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে পারে। আরেকটি কারণ হল এখানকার মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন এবং তাদের জীবনধারা স্বাস্থ্যকর।”

জাপানিরা খুব পরিশ্রম করে। ক্যান্সার এবং হৃদরোগ এড়াতে তারা সতর্কতা অবলম্বন করে। ডাক্তার হিরোকো বলছেন যে, জাপানের লোকেরা খাবারের দিকে মনোযোগ দেয়। কম চর্বি খাওয়া, বেশি করে মাছ, শাকসবজি ও গ্রিন টি খান। জাপানে মানুষের গড় বয়স বাড়ছে কিন্তু মোট জনসংখ্যা কমছে। প্রকৃতপক্ষে, জন্মহার কিছুদিন ধরে কমছে এবং চাকরি করতে সক্ষম বয়সী মানুষের সংখ্যাও ক্রমাগত কমছে।

বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এই বোঝাপড়াও তৈরি হয়েছে যে বয়স্কদের চাহিদাও আলাদা।

ডাক্তার হিরোকো বলেছেন যে সরকারের প্রধান মনোযোগ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং পেনশন ব্যবস্থার ওপর। আবাসন এবং পরিবহন ব্যবস্থারও যত্ন নেওয়া হয়েছে তবে সমাজের মৌলিক অবকাঠামো পুনর্গঠন করা দরকার। বয়স্ক ব্যক্তিদের কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করার জন্য অনেকগুলি সামাজিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান ডাক্তার হিরোকো ও তার দল।

ডাঃ হিরোকো বলেছেন, “আমরা একটি বয়স্ক সমাজের চাহিদা মেটাতে সমাজ পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছি। আমরা এমন একটি সমাজ তৈরি করতে চাই যেখানে মানুষগুলো সুস্থ, সক্রিয় এবং ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত একে অপরের পাশে থাকতে পারে। তারা নিজেদের নিরাপদ বোধ করবে। আমরা শুধু বয়স্কদের জন্য নয়, সব বয়সের মানুষের জন্য কাজ করছি।”

জাপানে একটি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর মানুষ নতুন চাকরি শুরু করছে। মানুষ তার দ্বিতীয় ক্যারিয়ার শুরু করছে। এটি একটা রুটিন বজায় রাখে এবং সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

ডা. হিরোকো আকিয়ামা ৭৮ বছর বয়সী এবং তিনি তার দ্বিতীয় কর্মজীবন উপভোগ করছেন।

তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলাম। আমার বয়স যখন ৭০ বছর, আমি কৃষিকাজ শুরু করি। আমিসহ চারজন, যাদের বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা রয়েছে, আমরা একসঙ্গে একটি কোম্পানি গঠন করে চাষ শুরু করি। আমি চেয়েছিলাম..আমি যখন ছোট ছিলাম তখন… একজন কৃষক হবো। এটা ছিল পুরোনো স্বপ্ন।”

শতবছর বাঁচতে চান কি না এই প্রশ্নে, ডাক্তার হিরোকো আকিয়ামা বলেন যে, তার মা ৯৮ বছর বয়সে মারা যান। একশ বছরের জীবনই যথেষ্ট। একশ বছরের বেশি বেঁচে থাকার বিশেষ কোনো ইচ্ছা তার নেই।

বার্ধক্য কী?
বার্মিংহামের অ্যাস্টন রিসার্চ সেন্টার ফর হেলদি এজিং-এর সিনিয়র লেকচারার ক্যাথি স্ল্যাক বলেন, “বার্ধক্য একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া। কোনো দুই ব্যক্তির বার্ধক্য প্রক্রিয়া একই নয়।” [আরও পড়ুন : কেমন জীবনসঙ্গী পছন্দ, যা বলছেন গুডলাক জেরি অভিনেত্রী জাহ্নবী কাপুর]

কেন আমরা বয়স্ক হই এবং এই জৈবিক প্রক্রিয়াটি ধীর করা যায় কি না, ক্যাথির ল্যাব এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।

বার্ধক্যের বাহ্যিক লক্ষণ সবারই জানা। বলিরেখা ও চুল পাকা হওয়ার মতো, কিন্তু আমাদের শরীরের ভেতরেও অনেক কিছু চলছে। ক্যাথি ব্যাখ্যা করেছেন যে বার্ধক্যের প্রভাব শরীরের সমস্ত টিস্যুতে দৃশ্যমান। এর প্রভাব মস্তিষ্ক থেকে উর্বরতা পর্যন্ত। এই পরিবর্তনগুলিকে বার্ধক্যের বৈশিষ্ট্য বলা হয়।

ক্যাথি ব্যাখ্যা করেন, “এতে অনেক প্রক্রিয়া জড়িত থাকতে পারে। কোষের অভ্যন্তরে প্রোটিনের মান নিয়ন্ত্রণ কমে আসা, মাইটোকন্ড্রিয়ার নিষ্ক্রিয় হওয়া। মাইটোকন্ড্রিয়া হলো কোষের সেই অংশ যা শক্তি তৈরি করে। বার্ধক্যের সাথে সাথে এই মাইটোকোন্ড্রিয়া কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।

ক্যাথি বলেন, যখন বার্ধক্য শুরু হয়, তখন ডায়াবেটিসের মতো স্থায়ী রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। কোষের কাজ করার জন্য পুষ্টির সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য। এটি ব্যাহত হলে স্টেম সেল অর্থাৎ মূল কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। স্টেম সেল কোষ মেরামত করে। মস্তিষ্কেও পরিবর্তন আসে।

ক্যাথি স্ল্যাক ব্যাখ্যা করেন, “কিছু লোকের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়। এর কারণে অনেক বয়স্ক মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের একই সাথে অনেক কাজ করতে অসুবিধা হয়। তাদের আচরণেও পরিবর্তন আসে। তারা হয় আরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন বা ডিপ্রেশনে চলে যান।

তাহলে কীভাবে আমরা আমাদের একশো বছর বাঁচার আশা জাগাতে পারি? ক্যাথি সেই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন।

ক্যাথি স্ল্যাক বলেছেন, “আজকে অনেক মানুষ আছেন যারা অনেক বয়স্ক। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য ভালো না, এই দিকটি নিয়ে কাজ করা দরকার। এটি একটি পুরানো পরামর্শের মতো শোনাতে পারে তবে আমাদের একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা দরকার। সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার কাজকর্মের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করুন। ভালো খান, খুব বেশি নয় আবার খুব কম নয়। আপনি যে পরিমাণ অ্যালকোহল খান সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। ধূমপান ত্যাগ করুন।”

বার্ধক্য সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু আছে যা আমরা জানি না। ক্যাথি স্ল্যাক বলেছেন যে ঐতিহাসিকভাবে আমরা রোগ প্রক্রিয়ার উপর বেশি মনোযোগ দিয়েছি।

অনেক বিজ্ঞানী আছেন যারা ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ নিয়ে কাজ করছেন, কিন্তু এখন তার মতো একদল মানুষ আছেন যারা রোগগুলোকে বয়সজনিত রোগ হিসেবে দেখছেন।

এভাবে অনেক রোগের চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যায়। [আরও পড়ুন : তৃষ্ণার্ত কিং কোবরাকে বোতল থেকে পানি দিলেন লোকটি, বিস্ময়কর ভিডিও]

আকর্ষণীয় পরীক্ষা
“আমার ল্যাবে, আমরা দেখাই যে বার্ধক্য প্রক্রিয়াটিকে ধীর করা সম্ভব, কিছু ক্ষেত্রে এটি বন্ধ করাও যেতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ধীর করা যেতে পারে।” আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজের ইনস্টিটিউট ফর এজিং রিসার্চের পরিচালক নীর বারজিলাই এভাবে বলেন। তিনি বলেন, এর (বার্ধক্য) গতিবিধিও বিপরীত করা যেতে পারে। এটা করা সম্ভব।”

পৃথিবীতে কতজন মানুষের বয়স ১০০ বছর বা তার বেশি তা অনুমান করা কঠিন।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ অনুমান করে যে ২০২১ সালে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ ছিল যাদের বয়স ১০০ বছর বা তার বেশি।

ডঃ নীর বারজিলাই তার গবেষণা সম্পর্কে বলেছেন যে যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ একশ বছর বা তার বেশি বেঁচে থাকে, এর জন্য তিনি কাজ করছেন এবং পরীক্ষা করছেন। শত বছর বয়স পূর্ণ করা সাড়ে সাত শতাধিক মানুষ ও তাদের পরিবারের কাছ থেকেও সাহায্য নিচ্ছেন তিনি।

তারা এমন জিন খুঁজছেন, যার মাধ্যমে বার্ধক্যের গতি কমানো যায়। এই তথ্য ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

তার দল বার্ধক্য সংক্রান্ত তিনটি সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে প্রথমটির উদ্দেশ্য হল প্রক্রিয়াটিকে ধীর করা। এটির নামকরণ করা হয়েছে কাল্পনিক চরিত্র ‘ডোরিয়ান গ্রে’র নামে, যিনি বয়স দ্বারা প্রভাবিত হন না, তবে এই প্রভাবটি তার লুকানো চিত্রকর্মে দৃশ্যমান।

নীর বারজিলাই ব্যাখ্যা করেন, “দ্বিতীয় পর্যায়টি হল যাকে আমরা বলি ‘যৌবনের ফোয়ারা’। এটি মানুষকে তরুণ করে তোলার বিষয়ে। এটি ঘটানো সবচেয়ে কঠিন। তৃতীয়টি সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ। এর নাম পিটার পেন। এই কাল্পনিক চরিত্রটি বয়স হয় না৷ ব্যাপারটা হলো- বিশ বা ত্রিশের কোঠায় পৌঁছানো কারও বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া পুরো থামিয়ে দেওয়া বা বয়স বাড়ার গতি কমাতে পারা।

বায়োমার্কার হলো এমন অণু যা অভ্যন্তরীণ রোগ নির্দেশ করে, যেমন কোলেস্টেরল, যা হৃদরোগ নির্দেশ করে। কিন্তু বার্ধক্য শনাক্ত করার জন্য এই ধরনের মার্কার খুঁজে পাওয়া সহজ নয়।

নীর বারজিলাই বলেছেন, “আমাদের প্রচুর বায়োমার্কার দরকার। আমরা এমন বায়োমার্কার খুঁজছি যে দুটি তথ্য দিতে পারে। প্রথমটি হলো- তা আসল বয়স এবং জৈবিক বয়সের মধ্যে পার্থক্য বলতে পারবে। আপনি দেখবেন যে কিছু লোককে তাদের বয়সের তুলনায় কম বয়সী মনে হয়। আবার কাউকে কাউকে বয়সের তুলনায় একটু বেশি বয়সী দেখায়। আমরা যে ওষুধগুলি তৈরি করছি তা দিয়ে বার্ধক্য কমাতে চাই, বায়োমার্কারগুলো পরির্তন আনতে চাই।

বার্ধক্য রোধের লক্ষ্যে তৈরি করা কিছু ওষুধ নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে এবং সেগুলিও প্রস্তুত করা হচ্ছে। এগুলি অন্যান্য পরিস্থিতিতেও ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে, এই ওষুধগুলি দেওয়া হয় যাতে শরীর অঙ্গটিকে প্রত্যাখ্যান না করে। [আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন ইয়ন মরগান]

ডাঃ নীর বারজিলাই টাইপ 2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ‘মেটফর্মিন’ নামক ওষুধের দ্বিতীয় উদ্দেশ্যে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

আপনি কি আশা করছেন যে আপনার জীবনে এই দিকটিতে কিছু বড় সাফল্য আসবে? যখন বিবিসি এই প্রশ্নটি করেছিল, তার জবাবে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা দুই বছরে কী করতে পারি তা নিয়ে আমরা অনুমান করতে পারি, তবে আমরা পাঁচ বা ১০ বছরের মধ্যে কী করতে পারি, তার অনুমান করা কঠিন। আমি মনে করি এই সেক্টরে একটি দারুণ কিছু চলছে। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরাও এতে বিনিয়োগ করছেন এবং এতে গতি আসছে।

বয়স তো বাড়বেই
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক রবার্ট ওয়াল্ডিংগার বলেছেন, “যারা অন্যদের সাথে ভালো এবং উষ্ণ সম্পর্ক রাখে তারা যারা ভালা সম্পর্ক রাখে না, তাদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে।”

রবার্ট ওয়াল্ডিংগার হার্ভার্ড স্টাডি অব অ্যাডাল্ট ডেভেলপমেন্টের পরিচালকও।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এটি আমাদের অধ্যয়নের ৮৪তম বছর। আমাদের জানা মতে, এটি একটি একক গোষ্ঠীর মানুষের উপর দীর্ঘতম গবেষণা। এ গবেষণা যখন শুরু হয় তখন তারা কিশোর, তাদের বয়স না হওয়া পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। এখন আমরা তাদের সন্তানদের ওপর গবেষণা শুরু করেছি। আমরা এটা জানার চেষ্টা করেছি, এই মানুষগুলোর জীবনে কী ভুল ছিল। এটি জীবনের সঠিক পথে চলার অধ্যয়নেও সাহায্য করবে।”

এই গবেষণাটি ১৯৩৮ সালে শুরু হয়েছিল।

গবেষণার বিষয়ে রবার্ট ব্যাখ্যা করেন যে প্রাথমিকভাবে ৭২৪ জন অংশগ্রহণকারী ছিল। তাদের অধিকাংশই মারা গেছে। কিন্তু নব্বই এবং একশ বছরের বেশি বয়সী কিছু মানুষ এখনও বেঁচে আছে।

তিনি বলেছেন যে এই গবেষণাটি এমন কিছু বিষয় প্রকাশ করেছে যার সাথে আমরা পরিচিত। এগুলি হল পুষ্টিকর খাদ্য এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস, যা দীর্ঘ জীবনযাপনে সাহায্য করে।

রবার্টের মতে, এই গবেষণায় দেখা গেছে যে অন্যান্য মানুষের সাথে আরও বেশি সম্পর্ক থাকা, তাদের আশেপাশের মানুষের সাথে আরও বেশি সংযুক্ত থাকা এবং উষ্ণতা দেখানো মানুষকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

রবার্ট ওয়াল্ডিংগার বলেছেন, “এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অনুমান হলো স্ট্রেস এবং টেনশন কাটিয়ে ওঠার সাথে সম্পর্কিত। ধরুন, কোনো বিষয়ে আপনি বিরক্ত হলেন বা কারও সাথে আপনার কথা কাটাকাটি হয়ে গেল, এর জের আপনাকে সারাদিন টানতে হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি বাড়িতে এসে এমন একজন বিশ্বস্ত কাউকে সব কথা খুলে বলতে পারেন, দেখবেন আপনার ক্লান্তি কমে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি যে যারা একা থাকে, তাদের রাগ কখনই পুরোপুরি দূর হয় না। তাদের মধ্যে সবসময় একটি হালকা উত্তেজনা থাকে। এটি শরীরের সিস্টেমকে নষ্ট করতে শুরু করে। গবেষণার মাধ্যমে আমরা তথ্য পাই যে ভালো সম্পর্ক আমাদের মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। [আরও পড়ুন : বিগ বসের এ সিজনে থাকছেন সালমান খান?]

দীর্ঘ জীবনের জন্য সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা একাকীত্ব পছন্দ করে।

তাদের উদ্দেশ্যে, রবার্ট ওয়াল্ডিংগার বলেছেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা সকলেই সুন্দর মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে চাই। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্তর্মুখী, সেটি একটি সমস্যা নয়। অন্তর্মুখীরা মনে করে তাদের আশেপাশের বেশিরভাগ মানুষই চাপের মধ্যে রয়েছে। তাদের শুধুমাত্র প্রয়োজন এক বা দু’জন ঘনিষ্ঠ মানুষ। এটিই তাদের জন্য যথেষ্ট। স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য আপনার কতজনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দরকার, সেটা সবার ক্ষেত্রে একই নয়। পোষা প্রাণীও আমাদের আনন্দের কারণ হতে পারে, মানসিক চাপ কমাতে পারে।”

রবার্ট বলছেন যে, তিনি সত্তর বা আশি বছরের বেশি বয়সী লোকদেরও অধ্যয়ন করেছেন এবং তারা তাদের জীবনে প্রথমবারের মতো সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন। কিছু মানুষ এই বয়সে প্রথমবার প্রেমে পড়েছে। তাই এটা বলা যেতে পারে, কোনো কিছুর জন্য কখনই খুব বেশি দেরি হয়নি।

এত কিছুর পর সেই একই প্রশ্ন ফিরে আসে- একশ বছর বাঁচার রেসিপি কী?

এমন কোন রেসিপি গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না, তবে একাধিক কাজের সমন্বয়ে সেটা পাওয়া যেতে পারে।

আপনার ডায়েট ঠিক রাখুন। শারীরিক কার্যকলাপ বজায় রাখুন। মন খুলে কথা বলার মতো বন্ধু খুঁজে নিন। আপনি যদি এমন একটি দেশে বাস করেন যেখানে বয়স্কদের সংখ্যা তরুণদের চেয়ে বেশি, সেখানেই হয়তো এমন কোনো পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে, যার ফলে আপনার জীবনসন্ধ্যা হবে উজ্জ্বল এবং স্বস্তিদায়ক।

মানুষ বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া থামিয়ে দেওয়া বা পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিপরীত করার ফর্মুলা এখনও জানা নেই কারো, তবে বিজ্ঞানীরা এটা নিয়ে কাজ করছেন।

সেই ফর্মুলা না পাওয়া পর্যন্ত রবার্ট ওয়াল্ডিংগারের পরামর্শ- শরীরের এমনভাবে যত্ন নিতে হবে যা আপনার একশ বছর বাঁচার জন্য সহায়ক হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *