এমন এক রকম চিনি আছে, যা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে না। ইনসুলিন হরমোনের হেরফেরও হবে না। গবেষকেরা এখন এই চিনিকেই সেরা বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। এর নাম অ্যালুলোজ। চিনির মতোই, কিন্তু ঠিক চিনি নয়। স্বাদেও মিষ্টি, তবে ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে উঠবে না।

ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রেও অ্যালুলোজ নিয়ে লেখা হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, চিনির বিকল্প এই উপাদানটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। বহু জনের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, চিনির বদলে অ্যালুলোজ খেলে ওজন কমে, এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স অর্থাৎ, ইনসুলিন হরমোনের তারতম্য ঘটার আশঙ্কা থাকে না।
কী এই অ্যালুলোজ?
এটি এক ধরনের মনোস্যাকারাইড। অর্থাৎ এটি চিনির একটি সরলতম রূপ, যেমন গ্লুকোজ বা ফ্রুক্টোজ। কিন্তু এর রাসায়নিক গঠন গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের থেকে কিছুটা আলাদা। তাই শরীরে এর কার্যকারিতাও অন্য রকম। তবে এর গঠন চিনির মতোই।
প্রতি গ্রাম অ্যালুলোজে ০.২ থেকে ০.৪ ক্যালোরি থাকে। সাধারণ চিনির থেকে এর ক্যালোরির মাত্রা দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র। খুব কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হওয়ায়, এটি রক্তে শর্করা বাড়ায় না। বরং অ্যালুলোজ মেশানো খবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না।
ওজন কমাতে উপযোগী অ্যালুলোজ। শরীরে জমা বাড়তি মেদ ঝরাতে পারে চিনির এই বিকল্প উপাদানটি। শুধু তা-ই নয়, শরীরে প্রদাহের মাত্রাও কমাতে পারে। চিনি বেশি খেলে যেমন লিভার, কিডনির ক্ষতি হয়, অ্যালুলোজ খেলে তা হয় না। এর বদলে শরীরে শক্তি তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি পুড়ে যায়। বেশি মিষ্টি খেলে যেমন দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়, অ্যালুলোজ খেলে তা হয় না।
বেকারির খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবারে এখন চিনির বদলে অ্যালুলোজ মেশানোর চল হয়েছে। অ্যালুলোজ আলাদা করে তৈরি করা হচ্ছে, তা বিক্রিও হচ্ছে বাজারে। তবে প্রাকৃতিক ভাবে অ্যালুলোজ পেতে হলে খেতে হবে কিশমিশ, শুকনো ডুমুর, কাঁঠাল বীজ, গুড়। ম্যাপেল সিরাপে অল্প পরিমাণে অ্যালুলোজ থাকে। চিনির প্রক্রিয়াকরণের সময়ে অ্যালুলোজ তৈরি হয়, এর ঘনত্ব চিনির থেকে কম। ফ্রুক্টোজ বা কর্ন সিরাপ থেকেও অ্যালুলোজ় তৈরি করা হয়, সে ক্ষেত্রে ফ্রুক্টোজের রাসায়নিক গঠন বদলে দেওয়া হয়।
সূত্র: আনন্দবাজার