মহাজাগতিক বিস্ময়: ‘স্ট্রবেরি মুন’ – কুসংস্কার ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় এক অলৌকিক রাত!

আজ রাতে আকাশে দেখা যাবে এক বিরল ও মনোমুগ্ধকর পূর্ণিমা – ‘স্ট্রবেরি মুন’ (strawberry moon)। এই চাঁদ শুধু তার সৌন্দর্য দিয়েই নয়, ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার এক অনন্য মিলনস্থল হিসেবে পরিচিত। এটি বিগত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিচু অবস্থানে ওঠা পূর্ণিমা চাঁদ এবং এমন দৃশ্য আবার দেখা যাবে ১৮ বছর পর, ২০৪৩ সালে।

স্ট্রবেরি মুন কী?
জুন মাসে যখন পূর্ণিমার চাঁদ আকাশে দেখা যায়, তাকে ‘স্ট্রবেরি মুন’ বলা হয়। এই নামটি উত্তর আমেরিকার আদিবাসী আমেরিকান উপজাতিদের কাছ থেকে এসেছে। এই সময়েই উত্তর আমেরিকায় বুনো স্ট্রবেরি ফল পাকতে শুরু করে এবং তারা এই চাঁদ দেখে স্ট্রবেরি সংগ্রহের মরশুম শুরু হওয়ার ইঙ্গিত পেত। যদিও চাঁদের রঙ স্ট্রবেরির মতো গোলাপী বা লাল হয় না, তবে দিগন্তের কাছাকাছি থাকার কারণে এটি কিছুটা কমলা বা লালচে দেখাতে পারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আলো বিচ্ছুরণের কারণে। ইউরোপে একে ‘রোজ মুন’ এবং উত্তর গোলার্ধে ‘হট মুন’ নামেও ডাকা হয়।


আজ রাতে কোন কোন দেশ বা অঞ্চল থেকে দেখা যাবে এই চাঁদ?
আজ, ১১ই জুন, ২০২৫ তারিখে বিশ্বের বহু দেশ থেকে ‘স্ট্রবেরি মুন’ দেখা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • বাংলাদেশ: সূর্যাস্তের পরপরই পূর্ব আকাশে দেখা যাবে।
  • ভারত: কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, জয়পুর, পুণে, হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন শহর থেকে দৃশ্যমান হবে।
  • মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা: এই অঞ্চলের দেশগুলো থেকেও চাঁদ দেখা যাবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট থেকে পরের দিন ভোর ৫টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত দৃশ্যমান থাকবে।
  • উত্তর গোলার্ধের অন্যান্য অঞ্চল: স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের উত্তর গোলার্ধের প্রায় সকল অঞ্চল থেকেই এই চাঁদ দেখা যাবে, তবে পরিষ্কার এবং দূষণমুক্ত আকাশ থাকলে দৃশ্যমানতা ভালো হবে।
    এই চাঁদ নিয়ে কী কী কুসংস্কার আছে?
    যদিও স্ট্রবেরি মুন নিয়ে সুনির্দিষ্ট বা ব্যাপকভাবে প্রচলিত কোনো কুসংস্কারের উল্লেখ পাওয়া যায় না, তবে প্রাচীনকালে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় এই পূর্ণিমাকে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত করে দেখত। চাঁদের বিভিন্ন নাম এবং পূর্ণিমার তারিখের সঙ্গে ফসল সংগ্রহ, শিকারের সময়, বা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সংযোগ তৈরি করত। যেমন, স্ট্রবেরি মুন স্ট্রবেরি পাকার সময়কে নির্দেশ করত। এর চেয়ে বড় কোনো নেতিবাচক কুসংস্কারের প্রমাণ নেই। বরং এটি প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এক সুন্দর মেলবন্ধন হিসেবে বিবেচিত।
    এই চাঁদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
    স্ট্রবেরি মুনের নামকরণের পেছনে কোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশেষ ব্যাখ্যা নেই, এটি মূলত একটি সাংস্কৃতিক নাম। তবে এই চাঁদের কিছু বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
  • পূর্ণিমা: এটি জুন মাসের পূর্ণিমা চাঁদ। পূর্ণিমার সময় সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ প্রায় একই সরলরেখায় থাকে, যার কারণে সূর্যের আলো সরাসরি চাঁদের উপর পড়ে এবং চাঁদকে সম্পূর্ণ গোলাকার ও উজ্জ্বল দেখায়।
  • কক্ষপথের অবস্থান: জুন মাসের পূর্ণিমা সাধারণত উত্তর গোলার্ধে বছরের সবচেয়ে নিচু অবস্থানে দেখা যায়। এর কারণ হল, এই সময়ে চাঁদ তার কক্ষপথে কিছুটা ঝুঁকে অবস্থান করে এবং সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে চাঁদ আরও নিচু জায়গা দিয়ে চলে।
  • রঙ: যদিও এটি ‘স্ট্রবেরি’ মুন নামে পরিচিত, চাঁদের রঙ আসলে লাল বা গোলাপী হয় না। তবে চাঁদ যখন দিগন্তের কাছাকাছি থাকে, তখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে আলোর প্রতিসরণের কারণে চাঁদকে কিছুটা কমলা বা লালচে দেখাতে পারে। বায়ুমণ্ডলে থাকা ধূলিকণা এবং অন্যান্য কণা নীল আলোকে ছড়িয়ে দেয়, কিন্তু লাল এবং কমলা আলো তুলনামূলকভাবে কম বিচ্ছুরিত হয়, যার ফলে চাঁদকে ওই রঙে দেখা যায়।
  • ১৮ বছরের চক্র: এই বছরের স্ট্রবেরি মুনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিচু অবস্থানে ওঠা পূর্ণিমা চাঁদ এবং এমন বিরল ঘটনা প্রতি ১৮.৬ বছর অন্তর ঘটে, যাকে ‘গ্রেট লুনার স্ট্যান্ডস্টিল’ বলা হয়।
    যারা মহাজাগতিক দৃশ্য দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য আজকের রাত এক স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে। তাই বাড়ির ছাদ, খোলা মাঠ বা পার্ক থেকে এই অসাধারণ মুহূর্তটি উপভোগ করতে চোখ রাখুন আকাশে!

This article is about:

full moon strawberry moon
strawberry moon
strawberry moon full moon