ইরানের সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র কতটা বিপজ্জনক এবং কেন এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাতে দুই দেশের যুদ্ধ সক্ষমতার পাশাপাশি তাদের অস্ত্রশস্ত্রও পরীক্ষার মুখে পড়েছে। বুধবার গভীর রাতে ইরান যখন ইসরায়েলে হামলা চালায়, তখন তারা প্রথমবারের মতো দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার দাবি করে। সেজিল একটি ভারী, দূরপাল্লার এবং বড় ওয়ারহেড ক্ষেপণাস্ত্র।

তবে ইসরায়েলের দাবি, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সফলভাবে সেজিলকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। ইরানের নাতাঞ্জ শহর থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হলে মাত্র সাত মিনিটেই ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে পৌঁছাতে পারবে বলে আন্দাজ করা যায়। নাতাঞ্জ থেকে তেল আবিবের দূরত্ব প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। 

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি জানিয়েছে, ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’র অংশ হিসেবে বুধবার গভীর রাতে এ হামলা চালানো হয়। এই হামলার পর সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে।

সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র কতটা শক্তিশালী?

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ভারতে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস আইআরজিসি’র পক্ষ থেকে সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। ইরানি দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছে, “এটি ‘ট্রু প্রমিজ ৩’-এর দ্বাদশ জবাব, যা খুব ভারী এবং দূরপাল্লার দুই পর্যায়ের সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে শুরু হয়েছিল।

“সেজিল ইরানের অন্যতম নির্ভুল ও শক্তিশালী কৌশলগত অস্ত্র। এর গুরুত্বপূর্ণ শত্রু লক্ষ্যবস্তু অনুপ্রবেশ এবং ধ্বংস করার ক্ষমতা আছে। সেজিল ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১৮ মিটার দীর্ঘ এবং এর শক্ত-জ্বালানী শক্তি এটিকে অন্যান্য জ্বালানীর চেয়ে অনেক সুবিধা দেয়। এই সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত উৎক্ষেপণ প্রস্তুতি, আরও ভাল স্টোরেজ ক্ষমতা এবং যুদ্ধের সময় আরও কার্যকর পারফরম্যান্স। 

২০০৮ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম সফল পরীক্ষা চালানো হয় এবং পরে এটি ৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও নেভিগেশন সিস্টেম পরীক্ষার জন্য ২০০৯ সালের মে মাসে দ্বিতীয়বারের মতো এটি চালু করা হয়।

মার্কিন থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মতে, ‘সেজিল ক্ষেপণাস্ত্রের অনেক ধরন থাকতে পারে। ২০০৯ সালে ইরান এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে সেজিল ২ বলে বর্ণনা করেছিল। একটি অসমর্থিত রিপোর্ট বলছে যে সেজিল ৩ আরও ভাল হতে পারে। সেজিল ৩-এর তিনটি ধাপ থাকবে, সর্বোচ্চ পাল্লা হবে ৪০০০ কিলোমিটার এবং লঞ্চের ওজন হবে ৩৮ হাজার কেজি।

২০১২ সাল থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রকাশ্যে পরীক্ষা করা হয়নি, যার ফলে এর মোতায়েন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় সেজিল উৎক্ষেপন করার ইরানের দাবি এই অনিশ্চয়তা দূর করতে সহায়তা করেছে।

এর আগে প্রায় এক দশক নিষ্ক্রিয় থাকার পর ২০২১ সালে এক মহড়ায় এটি উৎক্ষেপণ করে ইরান।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: এখন পর্যন্ত কী ঘটলো? 

গত ১৩ জুন তেহরান, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানসহ ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ও পরমাণু ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েল এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’।

ইসরাইলের মতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা থেকে কোনো সমাধান নেই, তাই ইরানে হামলা চালানোই ছিল শেষ উপায়। এর জবাবে ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইরানের এক হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেরশেবার সোরোকা হাসপাতাল ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইরান বলছে, তাদের লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের কাছে একটি সামরিক স্থাপনা।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় ৭১ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের আরও কয়েকটি এলাকায়ও রাতভর হামলা চালানো হয়। প্রতিশোধ নেওয়ার সময় ইরান প্রথমবারের মতো সেজিল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে।

হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আরাক ও নাতাঞ্জসহ ইরানের বেশ কয়েকটি পরমাণু ও সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। এদিকে রাতে আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরসহ ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনারা। তবে এই হামলার পর হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি ইরানি কর্মকর্তারা।