প্রকৃতির বুকে এমন কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে, যা বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করে। তেমনই এক বিস্ময়কর সামুদ্রিক জীব হলো ‘অমর জেলিফিশ’ বা Turritopsis dohrnii। এই ক্ষুদ্র জেলিফিশটি তার জীবনচক্রে এক অসাধারণ ক্ষমতা ধারণ করে, যা একে কার্যত অমরত্ব দান করেছে। এটি কীভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রকৃতিতে টিকে থাকে এবং নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করে তোলে, তা নিয়েই বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা চালাচ্ছেন।

এই জেলিফিশের প্রজাতি নিজেকে বারবার তার শৈশব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে, বার্ধক্যকে আক্ষরিক অর্থেই উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে এরা। জেলিফিশটির আকার খুবই ছোট মাত্র ৪-৫ মিলিমিটার। কিন্তু এই ছোট্ট শরীরেই লুকিয়ে রয়েছে আশ্চর্য ক্ষমতা, প্রকৃতির নিয়মকে উল্টে দেওয়ার শক্তি।
অধিকাংশ প্রাণীর জীবনের গতিপথ একমুখী রেখায় চলে। জন্ম, বেড়ে ওঠা, প্রজনন, তারপর মৃত্যু। কিন্তু এই জেলিফিশ তার পরিণত বয়সে পৌঁছে গেলে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবার তার কৈশোর বা শিশুবস্থায় ফিরে যেতে পারে।
একবার নয়, একাধিকবারই জেলিফিশটি তা করতে পারে। তাই বয়স যতই বাড়ুক না কেন, এরা বারবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে, অর্থাৎ কখনোই বার্ধক্য আসে না এদের জীবনে।
এই বিস্ময়কর প্রক্রিয়াটির নাম ট্রান্সডিফারেন্সিয়েশন, যেখানে একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোষ নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের কোষে রূপান্তর করতে পারে। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থান থেকে আবার পলিপ বা শিশু অবস্থায় ফিরে যায়।
বিজ্ঞানীরা এদের কোষের পুনর্জন্ম যেভাবে কাজ করে এনিয়ে গবেষণা করছেন।
মানুষের বার্ধক্য প্রক্রিয়া কীভাবে ধীরগতির করা যায় এটিও ভেবে দেখছেন তারা। আমাদের চিকিৎসায় এর প্রয়োগ কী হতে পারে, যেমন ক্যানসার প্রতিরোধ কিংবা বার্ধক্য প্রতিরোধ। এই জেলিফিশের জিনগত গঠন ও রহস্য ভেদ করতে পারলে হয়তো মানুষের জীবনকালও বাড়ানো সম্ভব হবে একদিন।
এটিকে বন্দী অবস্থায় লালন পালন করা বেশ কঠিন। বর্তমানে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিন কুবোতা নামক একমাত্র বিজ্ঞানী এই জেলিফিশের একটি দলকে দীর্ঘ সময় ধরে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
জেলিফিশগুলোকে প্রতিদিন পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত হতে হয় যে তারা তাদের যা খাওয়ানো হচ্ছে তা সঠিকভাবে হজম করতে পারছে কিনা। কুবোতা দুই বছরের মধ্যে তার ল্যাবে জেলিফিশদের মোট ১১ বার পুনর্জন্ম লাভ করতে দেখেছে ।