আজ থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে বরফ যুগে উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াতো এক বিশাল নেকড়ে – ডায়ার উলফ। এদের বিশাল আকার, প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা এবং প্রায় ৮০ কেজি ওজন, শক্তিশালী চোয়াল আর ভয়ংকর শিকারী স্বভাবের কারণে এরা ছিল তৎকালীন বাস্তুতন্ত্রের শীর্ষস্থানে।

এদের পুরু পশম ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করত, আর ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল দিয়ে তারা সহজেই বড় আকারের শিকার ধরতে পারত। ম্যামথ, বাইসন, মাস্টোডনের মতো বিশাল প্রাণীরাও এদের ভয়ে তটস্থ থাকত। দলবদ্ধভাবে শিকার করার কারণে তারা যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারত।
তবে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্যের অভাবের কারণে কালের বিবর্তনে এই প্রজাতিটি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। ডায়ার উলফেরা যেন রূপকথার অংশ হয়ে গিয়েছিল, যেখানে তারা বিশাল আকারের অধিকারী এবং অবিশ্বাস্য শক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল।
কিন্তু বিজ্ঞান যেন রূপকথার এই চরিত্রটিকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনার দুঃসাহসিক পথে হেঁটেছে। সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী আধুনিক জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডায়ার উলফের নিকটতম জীবিত আত্মীয় ধূসর নেকড়ের কোষ থেকে এমন কিছু কোষ তৈরি করেছেন, যা থেকে ডায়ার উলফের বৈশিষ্ট্যযুক্ত শাবকের জন্ম দেওয়া সম্ভব।
এই গবেষণার ফলে জন্ম নিয়েছে রোমুলাস ও রেমাস নামের দুটি পুরুষ ডায়ার উলফ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এরা আকারে ধূসর নেকড়েদের চেয়ে বড়, এদের পশম অনেক ঘন এবং চোয়ালও অনেক শক্তিশালী। শুধু তাই নয়, এদের শারীরিক গঠন এবং আচরণও ডায়ার উলফের মতো করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের এই অভাবনীয় সাফল্য অনেক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাতিকে কি এভাবে ফিরিয়ে আনা উচিত? বাস্তুতন্ত্রের ওপর এর কেমন প্রভাব পড়বে? হয়তো তারা তাদের আগের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না, অথবা নতুন কোনো রোগ ছড়াতে পারে।
আবার, যদি তারা প্রকৃতিতে নিজেদের স্থান করে নিতে পারে, তবে তা জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তবে এই গবেষণা ভবিষ্যতে অন্যান্য বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নতুন পথ দেখাতে পারে, এমনটা মনে করছেন অনেকে। হয়তো আমরা ডোডো পাখি বা তাসমানিয়ান টাইগারকেও আবার দেখতে পাব। ডায়ার উলফের ফিরে আসা যেন প্রকৃতি আর বিজ্ঞানের এক নতুন মেলবন্ধন, যেখানে সময় আর প্রকৃতির বাধা পেরিয়ে জীবন তার আপন গতিতে চলতে পারে। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির রহস্য কতটা গভীর এবং বিজ্ঞান কত দ্রুত তার সীমানা প্রসারিত করছে।