ভিটামিন-ডি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান, যা হাড়ের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। সূর্যের আলো ভিটামিন-ডি-এর প্রধান উৎস হলেও, বর্তমানে অনেকেই এর অভাবে ভুগছেন। ভিটামিন-ডি-এর অভাবকে হেলাফেলা করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

ভিটামিন-ডি কেন জরুরি?
ভিটামিন-ডি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে, যা মজবুত হাড় গঠনে এবং অস্টিওপরোসিস-এর মতো রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
ভিটামিন-ডি এর অভাবে যেসব বিপদ হতে পারে:
১. হাড়ের সমস্যা: ভিটামিন-ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেটস এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাসিয়া হতে পারে, যা হাড় দুর্বল করে দেয় এবং ব্যথা সৃষ্টি করে। দীর্ঘস্থায়ী অভাবে অস্টিওপরোসিস-এর ঝুঁকি বাড়ে, যা হাড় ভাঙার প্রবণতা বৃদ্ধি করে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: ভিটামিন-ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী রাখে। এর অভাবে সর্দি, ফ্লু এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি অটোইমিউন রোগ যেমন মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, লুপাস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকির সঙ্গেও জড়িত।
৩. মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন-ডি এর অভাব বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ বাড়াতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে যখন সূর্যের আলোর অভাব থাকে, তখন এই প্রভাব বেশি দেখা যায়, যা সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (SAD) নামে পরিচিত।
৪. ক্লান্তি ও পেশি দুর্বলতা: পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি না থাকলে আপনি প্রায়শই ক্লান্ত অনুভব করতে পারেন এবং পেশি দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। দৈনন্দিন কাজকর্মেও অনীহা আসতে পারে।
৫. হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: গবেষণায় ভিটামিন-ডি এর অভাবকে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যদিও এই সম্পর্ক নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
কীভাবে অভাব পূরণ করবেন?
সূর্যের আলো: প্রতিদিন সকালে ১৫-২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন। তবে দুপুরের তীব্র রোদ এড়িয়ে চলুন।
খাদ্য: তৈলাক্ত মাছ (যেমন স্যালমন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন), ডিমের কুসুম, কিছু মাশরুম এবং ফর্টিফাইড খাবার (যেমন দুধ, দই, সিরিয়াল) ভিটামিন-ডি এর ভালো উৎস।
সাপ্লিমেন্ট: যদি সূর্যের আলো বা খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি না পান, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।