১১০০ টাকা ধার করে মুম্বাই গিয়েছিলেন কুমার শানু, আজ তার ঝুলিতে ২৫ হাজার গান 

হিন্দি গানের বিশ্বখ্যাত গায়ক কুমার শানু। কুমার শানুর আসল নাম কেদারনাথ ভট্টাচার্য। কুমার শানুর প্রায় ৪০ বছরের সংগীত জীবন এবং তিনি প্রায় ২৫,০০০ গান গেয়েছেন।

আজও ‘আশিকি’, ‘সাজন’, ‘বাজিগর’-এর মতো ছবিতে তাঁর গাওয়া গান মানুষের মুখে লেগে থাকে। ‘আশিকি’ ছবির ‘আব তেরে বিন জি লেঙ্গে হাম’ এবং ‘দিওয়ানা’ ছবির ‘সোছ যায়েঙ্গে তুমহে পেয়ার, করে কি নেহি’ গানটি বেশ হিট হয়েছিল।

শুধু হিন্দি নয়, কুমার শানু আরও অনেক ভাষায় গান গেয়েছেন।  

কুমার শানুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। তার বাবাও ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে কুমার শানু সবার ছোট। কুমার শানু বলেন, আমার বাবা একজন সঙ্গীত শিক্ষক ছিলেন। বাড়িতে বাবা গান শেখাতেন। তাই আমরা এসব দেখে বড় হয়েছি। 

কর্মজীবনের শুরুর দিকে কুমার শানু কলকাতার হোটেলে গান গাইতেন। কিন্তু গানের জগতে ক্যারিয়ার গড়তে হলে মুম্বাই যাওয়া প্রয়োজন মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, তখন কলকাতায় অনেক টাকা ছিল। তবে আমার লক্ষ্য ছিল বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে গাওয়া। 

মুম্বাই যাওয়ার আগে তিনি কলকাতায় সংগীতের জগতে নাম অর্জনের জন্য বেশ চেষ্টা করেছিলেন। একটা সময় ছিল যখন কুমার শানু তাঁর গানের রেকর্ডিংয়ের ক্যাসেট তৈরি করে বাংলা সংগীত পরিচালকদের পাঠাতেন। কিন্তু বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে হতাশ হয়ে মুম্বাই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর মনে আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। 

কুমার শানু বলছেন, সেই সময় আমি বোম্বেতে প্রচুর সম্ভাবনা দেখেছি। আমি ভেবেছিলাম আমার সেখানে যাওয়া উচিত এবং চেষ্টা করা উচিত। দাদার কাছ থেকে ১১০০ টাকা ধার করে ট্রেন ধরে সোজা বম্বে চলে যাই।

কুমার শানু দ্বিতীয়বার যখন মুম্বাই যান, তখন মাত্র ছয় দিনের মধ্যে তিনি একটি হোটেলে চাকরি পান। একটি গেস্ট হাউসে গিয়ে সেই গেস্ট হাউসের মালিককে কুমার শানু অনুরোধ করেন তাকে গান গাওয়ার সুযোগ করে দিতে। 

এই গানের পর তিনি ১৪ হাজার টাকার বকশিশ পান এবং সেদিনই চাকরি পান। 

যদিও চাকরিটি তাঁর জন্য খুবই দরকার ছিল, তবুও তাঁর আসল স্বপ্ন ছিল, বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে গায়ক হওয়া। 

প্রত্যেক শিল্পীর একজন রোল মডেল থাকে এবং শুরুতে অনুসরণ করার মতো কেউ না কেউ থাকে। কুমার শানু গায়ক কিশোর কুমারের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা একজনকে অনুসরণ করি। আমি কিশোর দাকে অনুসরণ করলাম।

কিন্তু যখন নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেলেন, তখন একটা চিন্তা তার মাথায় পরিষ্কার হয়ে গেল। তিনি যদি শুধু কিশোর কুমারকে অনুসরণ করে যান তবে তিনি নিজের পরিচয় কখনও পাবেন না। 

সেই থেকেই নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে শুরু করেন তিনি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে একটি বিশেষ পরিচয় থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কুমার শানু ব্যাখ্যা করেন, যখন আমি কিশোর দা’র গান গাইতাম তখন এতে নিজের কিছুটা যোগ করতাম। সেটাই আমি আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠা করেছি। 

ওই সময় যতটুকু সুযোগ পেয়েছি, নিজের সবটুকু দিয়েছি। আর তারপর যখন ‘আশিকি’ ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ পেলেন, তখনই শুধু পরিচিতিই পাননি, গানের জগতে নতুন কণ্ঠ হিসেবে আবির্ভূত হলেন তিনি।

কুমার শানু বলছেন, ‘আমার গানে কিশোর দা’র এক ঝলকও পাবেন, কুমার শানুকেও দেখা যাবে।

তিনি বিশ্বাস করেন যে কোনও গায়কের জন্য তার নিজস্ব ইনপুট দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। গায়ক যদি কেবল প্রদত্ত নির্দেশাবলীতে গান করেন এবং এতে কিছু যুক্ত না করেন তবে তিনি এগিয়ে যেতে পারবেন না। 

তিনি বলেন, আমার অনেক গান আছে যেখানে আমি আমার ইনপুট দিয়েছি। এবং যে গানগুলোতে আমি আমার ইনপুট দিতে পারি না, আমি সেই গানগুলোর স্টেজ পারফরম্যান্সে আমার সমস্ত ইনপুট দিয়েছি। 

গুলশান কুমারকে স্মরণ করে কুমার শানু বলেন, গুলশান কুমার এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি সংগীত শিল্পকে তার প্রাপ্য দাবি করতে শিখিয়েছিলেন। সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক বা গীতিকার যাই হোন না কেন, গুলশান কুমার নিজে টাকা দিতেন এবং প্রাপ্য টাকা নেওয়াকে তিনি অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন। 

কুমার শানু তার সফল ক্যারিয়ারের জন্য গুলশান কুমারকে কৃতিত্ব দেন। “গুলশানজি আমাকে ‘ধীরে ধীরে সে মেরি জিন্দেগি মে আনা’ গানটি দিয়েছিলেন, তাই আমি আজ কুমার শানু হয়েছি।

আশিকি সিনেমা কুমার শানুকে রাতারাতি তারকা করে তুলেছিল।

নব্বই দশকের গান নিয়ে কুমার শানু বলেন, সে সময় গানের খুব মূল্য ছিল। ছবির অর্ধেক শুটিং হয়েছে সিনেমার মিউজিক বিক্রি করে। ‘আশিকি’ সিনেমাটি মুক্তি পেলে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত চন্দন টকিজে ছবিটি দেখতে যান কুমার শানু।

সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সিনেমা দেখার পর সবাই আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, আমাকে নিয়ে কথা বলছিল। সেদিনই তিনি বুঝেছিলেন যে, তার কণ্ঠ লক্ষ লক্ষ হৃদয় স্পর্শ করেছে।