ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক করা হয়েছে মোহাম্মদ আমানকে। আগামী ২১ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পুদুচেরিতে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দল ওয়ানডে সিরিজ খেলবে।
আসন্ন সিরিজ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার পুরো মনোযোগ আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে। এর জন্য দ্বিগুণ পরিশ্রম করব।
তবে আমানের গল্প কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যের চেয়ে কম নয়।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের রাস্তা থেকে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হয়ে ওঠা আমানের কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।
অধিনায়ক হওয়ার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
অধিনায়ক হওয়ার বিষয়ে ডানহাতি ব্যাটসম্যান আমান বলেন, ‘আগের দিন রাতে একটা ম্যাচ ছিল। পরের দিন আমি গভীর রাত পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিলাম যখন বন্ধুরা আমাকে বলেছিল যে আমাকে অধিনায়ক করা হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখি সবার হাতে অভিনন্দন বার্তা। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, তারপর বিসিসিআইয়ের অ্যাপে টিমকে দেখলাম। আমি সত্যিই ভাগ্যবান।
এই খবর পেয়েই আমান প্রথম ফোন করেন তাঁর কোচকে। আমন তার সাফল্যের জন্য তার কোচ রাজীব গোয়েলকে কৃতিত্ব দেয়। “শুরু থেকেই, তিনি আমাকে সবকিছু শিখিয়েছিলেন,” তিনি বলেন।
রাজীব গোয়েল বলেন, ‘আমানের ফোন এসেছিল, এসব বলার সময় সে কেঁদে ফেলেছিল। আমরা সবাই খুব খুশি, অনেক কষ্টের পর সে এখানে পৌঁছেছে।
আমান বলেন, ‘আমার ভাইবোনেরা আজ আমার চেয়ে বেশি সুখী। এমনটা জীবন তিনি কখনো দেখেননি। তারা ভাবছেন, সত্যিই কি এমনটা হতে পারে!”
গত মৌসুমটা দারুণ কেটেছে আমানের জন্য। ভিনু মানকড় ট্রফিতে, আমন ইউপি অনূর্ধ্ব -১৯ দলের হয়ে খেলার সময় আট ইনিংসে ৩৬৩ রান করেছিলেন।
একই সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যালেঞ্জার সিরিজে ৯৮ গড়ে ২৯৪ রান করেছেন তিনি। চলতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও স্ট্যান্ডবাই ছিলেন আমান।
সাহারানপুরের রাস্তা থেকে দলের অধিনায়কত্বের যাত্রা
মহম্মদ আমান কবে এই খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন, কীভাবে এমন হলেন জানতে চাইলে তিনি একটি মজার ঘটনা শোনান।
২০১১ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ভারতীয় ক্রিকেট দল তাদের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিতেছিল। তবে বিশ্বকাপ জয়ের আগে সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয় ভারত।
দিনটি ছিল ২০১১ সালের ৩০ মার্চের রাত। আমান বলেন, ‘সাহারানপুরের খান আলমপুরার দেরাদুন চকের কাছে গলিতে ঢাক-ঢোল পেটানো হচ্ছিল। আমি ছোট ছিলাম, ঘর থেকে বের হয়ে দেখি প্রতিবেশীরা ভারতের জয়যাত্রায় আনন্দে ঢোল পিটাচ্ছে।
বাবার মৃত্যুর পর আমান পুরোপুরি বদলে গিয়েছিল, খুব চুপচাপ থাকতে শুরু করেছিল। একদিন সে আমার কাছে এসে বলল- ‘শহরে, আমাকে কোথাও একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দাও। এখন আমাকে ক্রিকেট ছাড়তে হবে।
কীভাবে তিনি ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগী হয়েছিলেন, সেই রাতের কথা স্মরণ করে আমান বলেছিলেন, “এটি জানতে পেরেছিল যে ভারত ফাইনালে পৌঁছেছে। এরপর পাশের মামার বাসায় বসে ভারত-শ্রীলঙ্কা ফাইনাল দেখেছি। সেই রাত থেকেই ক্রিকেটের স্বাদ বাড়তে থাকে।
আমান আরও বলেন, ‘দিনরাত ক্রিকেট ফুটেজ দেখতাম। মোবাইলে, টিভিতে, সব জায়গায়। প্রথম দু-তিন বছর বাড়ির রাস্তায় বা পাশের পার্কে খেলতাম। টিভিতে যে শটগুলো দেখানো হতো, যেমন কভার ড্রাইভ মারার মতো বা খেলোয়াড় এভাবে ব্যাট ঘোরানো। আমিও একই কাজ করার চেষ্টা করতাম। অনেক মজা লাগলো। তারপর ২০১৪ সাল থেকে শহরের আম্বেদকর স্টেডিয়ামে খেলা শুরু করি।
‘বাবাকে হারানোর পর ভেবেছিলাম এখনই ক্রিকেট ছেড়ে দেব’
সাহারানপুরের অতি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন মহম্মদ আমান। তার মা ছিলেন গৃহিণী এবং বাবা ছিলেন ট্রাক চালক।
২০২০ সালে করোনায় মাকে হারান আমন। ২০২১ সালে, উত্তরপ্রদেশ অনূর্ধ্ব -১৯ দলের জন্য কানপুরে একটি ট্রায়াল ম্যাচ ছিল, তবে আমন নির্বাচিত হননি।
তাঁর বাবার স্বাস্থ্যও খারাপ হতে শুরু করেছিল এবং উপার্জনের কোনও উত্স ছিল না। ২০২২ সালে আমনের বয়স যখন ১৬ বছর, তখন তাঁর বাবাও মারা যান।
আমান একটু থেমে, তারপর সেই সময়ের কথা মনে করে বললেন, “আমি তখন একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন একদিনেই বড় হয়ে গেছি। বাবা যতক্ষণ ওখানে ছিলেন, ততক্ষণ বাড়ির দায়িত্ব সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। আমরা তিন ভাইবোন, আমি সবার বড়। এখন ভাবতে লাগলাম কিভাবে সংসার চলবে আর কিছুই বুঝতাম না।
ভারতের উত্তরপ্রদেশে বিভিন্ন গ্রামে নেকড়ে আতঙ্ক
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত চার ফিলিস্তিনি সাংবাদিক
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, “বাবার মৃত্যুর মাত্র ৩-৪ দিন পরে তিনি অনূর্ধ্ব -১৯ ভিনু মানকড় ট্রফির জন্য ইউপি শিবিরের ডাক পান। তখন সবাই বলে, ‘যাও ওখানে গিয়ে ভালো খেলো, তাহলে কিছু একটা ঠিক হয়ে যেতে পারে।কিন্তু তাতে ভালো পারফর্ম করতে পারেননি আমান।
আমান আরও বলেন, “ফিরে এসে ও সব দেখেছে। ভাই-বোন আছে, ঘরে রান্না করতে হয়। ভেবেছিলাম এখনই ক্রিকেট ছেড়ে দেব। সংসার চালাতে হলে টাকা রোজগার করতে হবে। কিন্তু তখন আমার কোচ রাজীব গোয়েল, বড় ভাই আকরাম সাইফি আমাকে সব রকম ভাবে সাহায্য করেছে।
আমানের কোচ রাজীব গোয়েল বলেন, “বাবার মৃত্যুর পর আমান পুরোপুরি বদলে গিয়েছিল, খুব চুপচাপ থাকতে শুরু করেছিল। একদিন সে আমার কাছে এসে বলল- ‘শহরে, আমাকে কোথাও একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দাও। এখন আমাকে ক্রিকেট ছাড়তে হবে।
এমন একজন প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়ের অর্থ সংকটের কারণে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া উচিত। অদ্ভুত লাগছিল। আমরা তাকে স্টেডিয়ামেই ছোট বাচ্চাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিলাম।