টিম ইন্ডিয়ার টপ অর্ডার কেন ফ্লপ হচ্ছে, ব্যাটিংয়ে সমস্যা কোথায়?


অ্যাডিলেডে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে শেষ হয়েছে। বাকি দু’দিন নেট প্র্যাকটিস করতে দেখা গিয়েছে টিম ইন্ডিয়ার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের।

তিন ঘন্টার অনুশীলন সেশনে একটি অনন্য দৃশ্য ছিল যখন কেএল রাহুল নেটের মধ্যে ব্যাট করছিলেন এবং তার ডানদিকে বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়াল এবং শুভমান গিল বাম দিকে ব্যাট করছিলেন।

টিম ইন্ডিয়ার জন্য, যা বর্তমানে একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই ছবিটি অনেক কিছু বলে দিচ্ছিল। কোহলি-রোহিত প্রবীণ প্রজন্মের অভিজ্ঞ হলেও রাহুল গিল-জয়সওয়ালের মতো তরুণ নন, কোহলি-রোহিতের মতো প্রতিষ্ঠিতও নন।

ঋষভ পন্থের পর তিনিই সম্ভবত দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান যিনি এই পরিবর্তন অনুভব করছেন। হেড কোচ গৌতম গম্ভীর, যিনি আম্পায়ারের ভূমিকায় বোলারদের প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি গম্ভীর গম্ভীর এই অনুশীলন গম্ভীর গম্ভীর এই অনুশীলন দেখছিলেন। শনিবার থেকে শুরু হওয়া ব্রিসবেন টেস্টে আরও একবার চোখ থাকবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দিকে।

সেই যুগে আর ফিরে যাওয়া উচিত নয়

গৌতম গম্ভীর তাঁর যুগে দেখেছেন, ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণের বিখ্যাত ত্রয়ী ভেঙে গিয়েছিল এবং তার পর কোহলি-পূজারা-রাহানে-রোহিতের যুগ শুরু হয়েছিল।

গম্ভীর এবং টিম ইন্ডিয়া চাইবে না ২০২৪-২৫ মরশুমে ভারতীয় ব্যাটিং ২০১১-১২ সালের মতো একই লড়াইয়ের মুখোমুখি হোক।

কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত ভেঙে পড়তে দেখে মনে হচ্ছে, এই সফরে উন্নতি না করলে ভবিষ্যতের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে নির্বাচক অজিত আগরকরকে।

স্বস্তির খবর, অস্ট্রেলিয়া সফরের পর আগামী ছ’মাস আর টেস্ট খেলতে হবে না টিম ইন্ডিয়াকে।

জাদেজা বনাম টপ অর্ডার

যদি আপনাকে বলা হয় রবীন্দ্র জাদেজা, যাঁকে পার্থ ও অ্যাডিলেডে টিম ইন্ডিয়া জায়গা দেয়নি, তাঁর ব্যাটিং গড় গত তিন বছরে টপ অর্ডারের এক-দু’জন নয়, তিনজন ব্যাটসম্যানের থেকে ভাল, তাহলে চমকে যাবেন!

এটা সত্যি যে টেস্ট ক্রিকেটে জাদেজার গড় গত তিন বছরে রোহিত শর্মা, শুভমান গিল এমনকি বিরাট কোহলির থেকেও ভালো, শুধু একটা সিরিজ বা এক বছর নয়।

পার্থে সেঞ্চুরি করে কোহলি অস্ট্রেলিয়ায় তার উজ্জ্বল শংসাপত্র বজায় রেখেছেন, অন্যদিকে গিল কার্যকর ইনিংস খেলেছেন।

কিন্তু গতবার গাব্বায় যেমন ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন, তেমনই এমন নির্ণায়ক ইনিংস প্রত্যাশা সবার।

ব্যাটিং দুশ্চিন্তার কারণ

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ (যেখানে তারা ০-৩ ব্যবধানে হেরেছে) থেকে শুরু করে পার্থ এবং অ্যাডিলেড টেস্ট, ভারতীয় টপ অর্ডারের পারফরম্যান্স হতাশাজনক।

যশস্বী জয়সওয়াল: সবচেয়ে বেশি ৩৭৬ রান করেছেন, যার মধ্যে ২৩৮ রান এসেছে মাত্র দুই ইনিংসে। বাকি ৮ ইনিংসে মোট ১৩৮ রান করেছেন (১৩, ৩৫, ৩০, ৭৭, ৩০, ৫, ০, ২৪)।

ঋষভ পন্থ: দ্বিতীয় সফল ব্যাটসম্যান, যিনি মোট ৩৪৮ রান করেছেন, যার মধ্যে তিন ইনিংসে ২২৩ রান অবদান রয়েছে। বাকি ৭ ইনিংসে করেছেন মাত্র ১২৫ রান (২০, ৯৯, ১৮, ০, ৬০, ৬৪, ৩৭)।

বিরাট কোহলি: পার্থে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে কোহলি অপরাজিত সেঞ্চুরি ও ৭০ রানের ইনিংস সহ নিজের রানের সংখ্যা ২১৬-তে নিয়ে যেতে পারেন। বাকি ৮ ইনিংসে তার রান ছিল মাত্র ৪৬ রান (০, ৭০, ১, ১৭, ৪, ১, ৫, ৭)।

গিল ও সরফরাজ খান: দুজনেই ৬-৬ ইনিংসে ২০৩ ও ১৭১ রান করেছেন।

২০২৪ সালে, টিম ইন্ডিয়া ৭ বার ২০০-র কম স্কোর করে অলআউট হয়েছে এবং গত ৫ টেস্টে এই ঘটনা ঘটেছে ৬ বার।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিদেশি ব্যাটসম্যানরা ধুঁকছেন

তবে এই সব খেলোয়াড়ের ব্যাটের চেয়ে যদি একটি বড় এবং দুর্দান্ত ইনিংস বেশি থাকে তবে তিনি অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ধর্মশালা টেস্টে সেঞ্চুরির পর ১২ ইনিংসে করেছেন মাত্র একটি অর্ধশতরান।

৩৭ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের সম্ভবত এটাই শেষ অস্ট্রেলিয়া সফর। এই মাঠে একটিও টেস্ট সেঞ্চুরি করতে না পারা, হয়তো ব্যাটসম্যান হিসেবে, বাকি জীবন তাকে তাড়া করে বেড়াবে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিদেশি ব্যাটসম্যানদের রান করা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে।

পার্থ টেস্টে রাহুল, জয়সওয়াল ও কোহলিও দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন। জয়সওয়াল এই সফরে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রথম ইনিংসে কোনও খাতাও খোলেননি। গত ৫ বছরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৪ ম্যাচে বিদেশি ব্যাটসম্যানরা গড়ে ২২-এর কম রান করেছেন এবং করেছেন মাত্র দুটি সেঞ্চুরি, যার একটি ভারতীয় ব্যাটসম্যান অজিঙ্কা রাহানের।

প্রথম ইনিংস ও গম্ভীরের ‘গুরুতর’ চ্যালেঞ্জ

কোচ গৌতম গম্ভীর প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত লড়াই নিয়ে চিন্তিত হতে পারেন, কারণ তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলের ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে ১৬ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন।

এই সময়ে একমাত্র সেঞ্চুরিটি আসে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে।

শুধু তাই নয়, চলতি সফরে চার ইনিংসে তিনবারই দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন নীতীশ কুমার রেড্ডি। রেড্ডির সাফল্যের থেকেও এই পরিসংখ্যান টিম ইন্ডিয়ার টপ অর্ডারের ধারাবাহিক ব্যর্থতার প্রতিফলন।

আশা করা যায়, গতবার গাব্বার গৌরব ভেঙে দেওয়া টিম ইন্ডিয়া এবারও তাদের ব্যাটসম্যানদের শক্তিতে জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারবে। এতে শুধু ভারতীয় ব্যাটিং-এর উন্নতি হবে না, সিরিজ জয়ের আশাও বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *