জব্বারের বলী খেলা শুধু একটি খেলা নয়, এটি শত বছরের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির ধারক। এটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম।

প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে লালদীঘি ময়দানে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা হাজার হাজার দর্শককে আকর্ষণ করে। এই খেলাকে কেন্দ্র করে পুরো চট্টগ্রাম যেন এক আনন্দময় উৎসবে পরিণত হয়। বলী খেলা মূলত কুস্তি বা মল্লযুদ্ধের একটি স্থানীয় রূপ। ‘বলী’ শব্দটি মূলত এসেছে শক্তিশালী বা বলবান ব্যক্তি থেকে, আর ‘খেলা’ মানে তো খেলাধুলা। তাই বলী খেলা মানে হচ্ছে শক্তিশালী মানুষের খেলা।
এই খেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুইজন শক্তিশালী মানুষের শারীরিক শক্তি ও কৌশলের প্রদর্শন। বলী খেলার ইতিহাস বেশ পুরনো। মনে করা হয়, মুঘল আমলে এই অঞ্চলের শাসনকালে মল্লযুদ্ধ বা কুস্তির প্রচলন ছিল। তবে, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে উৎসাহিত করতে এবং যুবকদের শারীরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য এই খেলার প্রচলন করেন।
সেই থেকে এই খেলা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। আব্দুল জব্বার সওদাগরের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় যুবকদের মধ্যে সাহস ও শক্তি সঞ্চার করা, যাতে তারা দেশের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। জব্বারের বলী খেলা এখন একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসবে পরিণত হয়েছে।
এটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং এর সাথে যুক্ত হয়েছে বৈশাখী মেলা, যেখানে স্থানীয় কারুশিল্প, হস্তনির্মিত পণ্য এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। এই মেলা কয়েকদিন ধরে চলে এবং এটি বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে একত্রিত করে। এই সময়টাতে লালদীঘি ময়দান ও তার আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য থাকে।
বলী খেলার নিয়মকানুন বেশ সরল। সাধারণত, দুটি শক্তিশালী মানুষ একটি বৃত্তাকার বা বর্গাকার ময়দানে অংশ নেয়। তাদের লক্ষ্য থাকে প্রতিপক্ষকে মাটিতে ফেলে দেওয়া। খেলায় কোনো আঘাত করা হয় না, শুধুমাত্র শারীরিক শক্তি ও কৌশলের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে হয়। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে কঠোর প্রশিক্ষণ নেয় এবং তারা ‘বলী’ নামে পরিচিত। জব্বারের বলী খেলা চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধুমাত্র একটি খেলা নয়, বরং এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই খেলা স্থানীয় যুবকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে উৎসাহিত করে এবং আমাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখে।